English
বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪
...

প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে টাকা পাঠালেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা, ১৪ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে  ঈদ উপহার হিসাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন  থেকে ভিডিও  কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, "এ অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। আমরা হয়তো অনেক বেশি দিতে পারবো না। কিন্তু কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়, সবাই যাতে সামান্য হলেও সহায়তা পায় আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।" 

নগদ এই টাকা বিনা খরচে যাতে এসব পরিবারের কাছে ঈদের আগেই  পৌঁছে যায় তার জন্য যাবতীয় তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। হতদরিদ্র এসব প্রতিটি পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা হিসাবে সাড়ে ১২ শ’কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা একই সাথে অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ সালের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাষ্টের আওতায় প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি এবং উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। 

আধুনিক এ বিশ্বে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশও যে এগিয়ে যাচ্ছে এ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার মানসে একইসাথে সুইচ চেপে অনলাইনে দুইটি        কর্মসূচির উদ্বোধন করার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এটাই হলো আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ। কারো কাছে যেতে হবেনা, ধর্না দিতে হবেনা, বলতে হবেনা, কিন্তু সবার কাছে টাকা হেঁটে পৌঁছে যাবে। মানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পৌঁছে যাবে।"

শেখ হাসিনা বলেন, "মানুষের জীবনে প্রয়োজন অনেক বেশি। মানুষদের ক্ষুধার জ্বালা আমরা বুঝি। এ জন্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এমন একটি অদৃশ্য শক্তির  (করোনা ভাইরাস) মোকাবেলা কোনো দেশই করতে পারছে না। কত শক্তিশালী দেশকেও আমরা দেখেছি, এই করোনা ভাইরাস শক্তির কাছে সারেন্ডার করছে।" 

শেখ হাসিনা বলেন, "লাভ হয়েছে প্রকৃতির। জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশ-প্রতিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। প্রকৃতি তার আপন গতিতে ফিরে যাচ্ছে। এটি একটি অদ্ভুত ব্যাপার, এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীতে আর কখনও ঘটেনি। অনেক মহামারি ও দুর্ভিক্ষের... কাহিনি আমরা জানি। কিন্তু এবারের বিষয়টা ভিন্ন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। ৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন সময় একটি অদৃশ্য শক্তির আঘাত, যার ফলে সমগ্র বিশ্ব একেবারে থমকে গেছে। সারা বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে আক্রান্ত।" 

এই নগদ অর্থ প্রদান কর্মসূচি যথাযথ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত ও দুস্থ পরিবারদের চিহ্নিতকরনা করেছে স্থানীয় সরকারের অধীন জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ। গত ৭ মে সমাপ্ত শেষ দরিদ্রদের জন্য একটি তালিকা, যদিও এটি যাচাই-বাছাইয়ের কাজও চলছে। 

এ তালিকায় রয়েছে - বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষ যেমন - দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ব্যবসা ও দোকানের শ্রমিক-কর্মচারী, পোল্ট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানা পেশার মানুষ। 

উল্লেখ্য, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সহায়তায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বর্তমানে যেসব সহায়তা পাচ্ছে, এ তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শেখ হাসিনা এপ্রসঙ্গে  বলেন, তাঁর সরকার সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে দ্বৈততা পরিহারের চেষ্টা করেছে এবং আসন্ন ঈদ ও রমজানকে উপলক্ষ্য করেই এই সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। তিনি একেবারে বেকার ঘরে বসে না থেকে করোনার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই কিছু কিছু কাজ-কর্ম করার জন্য মেহেনতি মানুষকে পরামর্শ দেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশে তখন মঙ্গা থাকে না, দরিদ্র থাকে না, এটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, "অন্যান্য দেশে যেভাবে করোনা আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে সে তুলনায় আমরা কিন্তু অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।"

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বরগুণা, শরিয়তপুর, সুনামগঞ্জ এবং লালমনিরহাটের উপকারভোগী জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস। এতে  শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি অনুষ্ঠানে শিক্ষা  মন্ত্রণালয় থেকে সংযুক্ত হন এবং বক্তব্য রাখেন। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।আরো উপস্থিত ছিলেন গণভবন প্রান্তে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পিএমও এবং গণভবনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। 




মন্তব্য

মন্তব্য করুন